০১. প্রাসঙ্গিকতা
পাহাড় আর পাহাড়ি বন, পাহাড়ি ঝর্ণা আর সরুনদী এবং পাহাড়ের অনন্য নৈসর্গিক সৌন্দর্যে শোভিত প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ পার্বত্য চট্টগ্রাম। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি আদিবাসীদের সামাজিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা ও রাজস্ব আদায়ের ল্েয সমগ্র চট্টগ্রামকে বৃটিশ শাসকগোষ্ঠী (১) সংরতি বনাঞ্চল, (২) চাকমা সার্কেল, (৩) বোমাং সার্কেল, (৪) মং সার্কেল এবং মাইনি উপত্যকা এই ৫টি ভাগে বিভক্ত করে (ঈঐঞ জবমঁষধঃরড়হ, ১৯০০ : জঁষব ৩৫)।
এরই ধারাবাহিকতায় বিগত ১৯৮১ সনে বান্দরবান মহকুমাকে এবং ১৯৮৩ সনে খাগড়াছড়ি মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এই ৩টি জেলার সার্বিক উন্নয়নে ‘পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ‘ আইন ১৯৮৯ (১৯৮৯ সনের ১৯ নং আইন) প্রণীত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের মাঝে ভাষাগত ও নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর মাঝে পরস্পর কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও ইতিহাস-ঐতিহ্য, জীবন-সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাস আর সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে রয়েছে বহুবিধ ঐক্য ও অভিন্নতা। ঐতিহাসিক, ভৌগলিক, নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক স্বকীয় বৈশিষ্ট্য মন্ডিত মঙ্গোলিয় (গড়হমড়ষড়রফ) বংশোদ্ভূত তিব্বতি-বর্মি পরিবারভূক্ত চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গা, চাক, লুসাই, পাংখোয়া, বম, ম্রো, খেয়াং, খুমি, রাখাইন ও মাহাতো সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের ১০টি ভিন্ন ভাষাভাষী ১৩টি পাহাড়ি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসত পার্বত্য চট্টগ্রামে।
এদেশের সংবিধান ও সংশ্লিষ্ট সরকারি আইন এবং আন্তর্জাতিক আইন ও সরকার স্বারিক বিভিন্ন সনদেও এই নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর স্বাধীন ও বাধাহীন শান্তিপূর্ণ ভাবে নিজ নিজ জীবন ও সাংস্কৃতিক অনুশাসন মেনে চলার অধিকার আছে। তবু কেনো সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্র পরিচালনা কৌশলে নানাবিধ সংঘাত আর সংকটে আদিবাসীদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়ে ?
১৯৯১ সনের আদমসুমারী অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৩,২৯৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মোট জনসংখ্যা ৯,৭৪,৪৪৫ জনের মধ্যে আদিবাসী কিংবা উপজাতীয় ৫,০১,১৪৪জন এবং সাম্প্রতিক বসতী অ-উপজাতীয় বা বাঙালির সংখ্যা ৪,৭৩,৩০১জন। সরকার স্বীকৃত ১৩টি উপজাতির পৃথক জনসংখ্যা যথাক্রমে- চাকমা ২,৩৯,৪১৭জন; মারমা ১,৪৬,৩৩৪জন; ত্রিপুরা ৬১,১২৯জন; মুরং ২২,০৪৯জন; তঞ্চঙ্গা ১৯,২১১জন; বম ৬,৯৭৮জন; চাক ২,০০০জন; খুমি ১,২৪৯জন; খেয়াং ১,৯৫০জন; লুসাই ৬,৬৬২জন; ম্রো ১২৬জন; পাংখোয়া ৩,২২৭জন এবং রাখাইন ৭০জন। এছাড়া সাঁওতাল ২৫৩জন ও অন্যন্য ৫,০০৫জন এবং এরাও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের অংশ।
যে কোন জনগোষ্ঠীর জীবন ও সংস্কৃতি প্রভাবিত হয়ে থাকে প্রধানত: ধর্মীয় বিশ্বাস, ভাষা ও শিক্ষা, পেশা ও জীবিকা, পারিবারিক ও সামাজিক নানাবিধ কর্মকান্ডের দ্বারা। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আদিবাসীদের মধ্যে চাকমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, মারমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, ত্রিপুরা সনাতন তথা হিন্দু ধর্মাবলম্বী, খিয়াং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, ম্রো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী তবে কিছু সংখ্যক খৃস্টান, রাখাইন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী তাদের নিজ নিজ মতাদর্শে প্রকৃতি ও নানা দেব-দেবীর পুঁজার মাধ্যমে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে।
পেশার দিক থেকে প্রায় সকল আদিবাসীরাই পাহাড়ি প্রাকৃতিক সম্পদ সংশ্লিষ্ট বৃহৎ অর্থে কৃষিকাজে জড়িত। আবার কেউ কেউ কৃষি শিল্প ব্যবসায় জড়িত আবার কেউ কেউ আধুনিক শিার বদৌলতে সরকারি-বেসরকারি চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কেননা সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় শিক্ষা-সংস্কৃতির দিক থেকে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গা, লুসাই, বম, রাখাইন বেশ এগিয়ে আসছে দিনে দিনে।
জীবন-জীবিকা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে প্রত্যেক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীই কমবেশি স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে নিজ নিজ কৌশলে জীবন ধারণ ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে। তবে সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মাঝে যেমনি আছে বহুবিধ ভিন্নতা তেমনি আছে বহুবিধ সমতা কিংবা অভিন্নতাও।আর এই অভিন্নতার প্রেক্ষিতেই পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৩টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী নানা ভাবে নিজেদের ন্যায় সঙ্গত অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে করে আসছে আন্দোলন ও সংগ্রাম সকলে সংঘবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন সময়ে।
প্রকৃতি ও প্রশাসনিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক, সম্পদ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার বহুবিধ অব্যবস্থাপনা, অদ ও দূর্বল পরিকল্পনা, নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকার পরিচালকদের কদাচিৎ পপাত মূলক দৃষ্টিভঙ্গি, দলীয় ও সাম্প্রদায়িক আদিপত্তবাদ ইত্যাদি নানাবিধ কারণে পার্বত্র চট্টগ্রামের ১৩টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী আর্থ-সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে থেকে জীবন কাটাচ্ছে কষ্টে-সংকটে।
আমরা বিশ্বাস করি এবং মনেপ্রাণে অনুভব করি যে, যথাযথ সামাজিক , রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষি সম্পদ, বনজ সম্পদ, মৎস্য ও জলজ সম্পদ, খনিজ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ লাগসই পরিবেশবান্ধব যৌক্তিক ব্যবহারে এই আদিবাসীরা নিজেরা সম্পদ-সমৃদ্ধি নিয়ে বেঁচে থেকেও রাষ্ট্রীয় উৎপাদন বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অসামান্য ভূমিকা রাখতে পারতো।
একদিন যে আদিবাসীরা পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি ভূমি আর পাড়াড়ের ঢাল, হালকা আর ঘন বনাঞ্চল, লেইক আর পুকুর-দিঘীর জলাশয়, বন্য পশুপাখি ইত্যাদির সংশিষ্টতায় নিজ নিজ পেশায় জড়িত থেকে বেশ ভালোই ছিলো আজ তারা তেমনটি নেই। আর কেনোইবা নেই তাকে খুঁজে বের করার মতো উদার ও নিরপে দৃষ্টিভঙ্গী এবং মানসিকতাও আমাদের মাঝে অনেকাংশেই অনুপস্থিত।
স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে মুক্ত স্বাধীন অবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষিজ, বনজ, জলজ, খনিজ ইত্যাদি নানাবিধ প্রাকৃতিক অবারিত সম্পদের উপর এই আদিবাসীদের অধিকার ক্রমান্বয়ে খর্ব থেকে খর্ব হতে হতেই সংকটের রাজত্বে ঠেলে দিয়েছে তাদের। উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, সম্পদ লোভীদের ভূমিদুস্যতা আর স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি বিরোধীদের উসকানিতে সরলপ্রাণ দরিদ্র বাঙালিরাও জড়িয়ে পড়েছে অনাকঙ্খিত সংঘাতে। প্রকৃতির মতোই শান্ত সুশীতল পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের বসতি আজ অপরিকল্পিত উন্নয়ন কালোছায়ায়, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার নামে কোথাওবা প্রতিবাদী চেতনার নারী অপহরণের আতংকে এবং সীমাহীন প্রাকৃতিক সম্পদের সামান্য কোন ধরে বোকার মতো পাহাড়ি ও বাঙালির লড়াইয়ে অশান্ত-অনিরাপদ জনপদে পরিনত হয়েছে।
নিজেদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলতে গিয়ে কিংবা প্রমাণিত অন্যায়-অবিচারের-নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিরাপত্তাদাতাদের হাতেই কখনোবা ওদের পড়তে হয় নিরাপত্তাহীনতায়। কলেজের সিঁড়ির দ্বিতীয় ধাঁপ ডিঙ্গাবার প্রস্তুতিকালেই তথাকথিত নিরাপত্তাদাতাদের একজনের দ্বারা অপহৃত হতে হয় নারী নেত্রী কল্পনা চাকমাকে বিগত ১৯৯৬ সনের ১২ জুন ভোর রাতে নিজের বাড়ি থেকে পরিবারের সকলের উপস্থিতিতে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ১০ ল আদিবাসী জনগণ আজ দারিদ্র থেকে দারিদ্র হতে হতেই কষ্টের সমুদ্রে দূর্বিসহ অবস্থায় দিনাতিপাত করছে নানাবিধ কষ্টের হিসাব মিলাতে মিলাতেই।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি ও জাতিগত সংঘাতের স্থায়ী অবসানকল্পে ১৯৯৬ সনের ২১ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৭ সনের ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৭টি আলোচনা ও সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসব বৈঠকের কার্যকর ও সফল আলোচনার ফলশ্র“তিতে ১৯৯৭ সনের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের পে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির প্রধান ও চীফ হুইপ আবুর হাসনাত আবদুলাহ এম.পি. এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রধান শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু) এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বারিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পারিবারিক ও সামাজিক, ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক এবং জীবন ধারণের আদি ঐতিহ্যের স্রোতধারা আজ পথ হারাতে বসেছে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের নানাবিধ উন্নয়ন শাসনে। আবার কোন কোন বুদ্ধিজীবী নাকি আদিবাসীদের নিজস্ব নৃতাত্ত্বিক জাতি স্বত্ত্বাকে বদলে নেবার পরামর্শও দিয়েছেন। প্রকৃতপে একজন বাঙালি যেমনি কখনো আদিবাসী হতে পারে না তেমনি একজন আদিবাসীও কখনো বাঙালি হতে পারে না। আমাদের দেশের আর সামাজিক শান্তি-সমৃদ্ধির স্বার্থেই সকল নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্য সংরণ আর উন্নয়ন দরকার।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ভিত্তিতে ১৯৯৮ সনে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন, ১৯৯৮ (১৯৯৮ সনের ১২ নং আইন) প্রণীত হয়। এই আইনের আওতায় গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ড তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় সাধন, পৌরসভাসহ স্থানীয় পরিষদসমূহ তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় সাধন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কার্যাবলী তত্ত্বাবধান, পার্বত্য জেলার সাধারন প্রশাসন ও আইন শৃংখলা এবং উন্নয়নের তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় সাধন, উপজাতীয় রীতিনীতি-প্রথায় সামাজিক বিচার সমন্বয় সাধন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভারী শিল্প স্থাপনের লাইসেন্স প্রদান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ত্রাণ কার্যপরিচালনা ও এনজিও কার্যাবলীর সমন্বয় সাধন ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করে থাকেন যাতে স্বশাসনের অনেকটাই পূরণ হতে পারে।
সামাজিক, নৃতাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক মাঠ গবেষনায় প্রাপ্ত ফলাফল এবং অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য নির্ভর এই নিবন্ধের অন্তর্গত বিষয়াদি উপস্থাপনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে সহনশীলতা ও পারস্পারিক সহমর্মীতা সৃষ্টির মাধ্যমে বাস্তব অবস্থা অনুধাবন ও অনুশীলনে সমৃদ্ধ এক শান্তির পাহাড়ি জনপদের স্বপ্ন দেখছি এবং সংশিষ্ট সকলকে সেই সুখের স্বপ্ন দেখাতে সচেষ্ট আছি।
০২. আদিবাসী প্রাসঙ্গিক কতিপয় মন্তব্য, মতামত ও প্রত্যাশা
পারিবারিক, সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় পরিমন্ডলের যে কোন উদ্ভূত সংকট-সংঘাতকে সহনশীল ও সহমর্মীতার মন্তব্য, মতামত ও প্রত্যাশার উচ্চারণ যেমনি দমিয়ে রাখতে পারে তেমনি উস্কানিমূলক বাক্য-বক্তব্য করতে পারে জটিল থেকে জটিলতর। তাই আমাদের নানাবিধ নিবন্ধের অন্তর্গত বিষয়াদি ও বক্তব্যকে পাঠকের কাছে কার্যকর ভাবে তুলে ধরার স্বার্থেই কতিপয় মন্তব্য, মতামত ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরছি।
‘একজন বাঙালী কোনদিন চাকমা হতে পারে না, অনুরুপ একজন চাকমাও কোনদিন বাঙালী হতে পারে না।’
-মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা, ১৯৭২ খ্রিঃ
‘দেশ আজ চলছে বর্ণনাতীত অরাজকতার মধ্য দিয়ে চলছে, দুর্নীতি-দুঃশাসনে জনগণের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। –আমরাতো আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের সেই অতন্ত্র প্রহরী যারা শুধু শত্র“র আক্রমন প্রতিহত করেই ক্ষান্ত হইনা, নতুন ইতিহাস নির্মাণ করি। ইতিহাস নির্মাণের যে দ কারিগর হিসাবে পরিচয় বহনকারী আমাদের ছাত্র সমাজকেই আবার এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব নিতে হবে।’
– কল্পনা চাকমা, ১৭ নভেম্বর ১৯৯৫ খ্রিঃ
The Chakmas of the area appear to be afraid and very tense about the situation and future army actions. They appear to have little or no access to the local administration, which appeared to us to be baised towards the army and Bengali settlers.` -Shaheen Akter, Khaleda Khatun and Nipa Rahim of ASK; Journalist Morshed Ali Khan of Daily Star; Chakma Activists Pricilla Raj of Samaj Chetona; Ravi Shankar Chakma, Ujjal Chakma and Kabita Chakma
(Ref. Draft Field Report/Ain O Salish Kendra/RDA Cell/6 July 1996 which published in the book ‘Kalpana Chakmar Diary on 12 June 2001 by Hill Women’s Federation)
)
‘ভূমি ও জাতিগত সংঘাতময় পার্বত্য চট্টগ্রামের সামাজিক, নৃতাত্ত্বিক এবং রাজনৈতিক বাস্তবতায় সহনশীলতা ও পারস্পারিক সহমর্মীতা সৃষ্টির মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ শান্তির পাহাড়ি জনপদ আবারো ফিরে পাওয়া সম্ভব।’
– সিরাজুল করিম, জুলাই ১৯৯৭ খ্রিঃ
‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমিতে ফসল ও ফল চাষের মাধ্যমে ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিৎ করা গেলে এই অঞ্চলে এক কোটি মানুষের খাদ্য সংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’
– ড. মোহাম্ম্দ আবদুর রব, অক্টোবর ১৯৯৭ খ্রিঃ
‘পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে যে নিষ্ঠুর খেলা শুরু হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য তা মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে।–১৩টি উপজাতির রয়েছে স্বতন্ত্র প্রকৃতি, স্বতন্ত্রকথ্য ভাষা, স্বতন্ত্র ধর্মীয় আচার এবং স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক চেতনা’।
– এমাজ উদ্দীন আহমদ, অক্টোবর ১৯৯৭ খ্রিঃ
‘চুক্তি বাস্তবায়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে একটি স্থায়ী সংঘাতের জন্ম দেবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতা স্থায়ী সংকটে নিপতিত হবে।’
-ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী ও ড.মোহাম্মদ আবদুর রব, অক্টোবর১৯৯৭ খ্রি
‘পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান সমস্যা ও সমাধানের সঙ্গে ওৎপ্রোত ভাবে যে প্রশ্নটি জড়িত সেটা হলো সেখানে মোতায়েন করা সেনাবাহিনীর ভূমিকা।’
-মেজর জেনা.(অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বীরপ্রতীক,১৯৯৭ খ্রিঃ
‘পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক রক্ত ঝরেছে। ঝরে গেছে অনেক নিরীহ প্রাণ। কাউন্ট ইমারজেন্সীতে ব্যয় হয়েছে অনেক অর্থ যা দারিদ্র মানুষের জীবনে মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্যে কাজে লাগানো যেত।’
– সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অক্টোবর ১৯৯৭ খ্রিঃ
‘পার্বত্য চট্টগ্রাম কি চুক্তি স্বারের পরেও আজকের মতো দৃশ্যতঃ না হলেও সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রনেই থাকবে? অথচ এই সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রনের বিরুদ্ধেই স্থায়ী অধিবাসীদের অভিযোগ এবং সংগ্রাম। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী ভাবে সেনাবাহিনী রেখে স্থায়ী অধিবাসীদের দাবি পূরণ কি সম্ভব?’
-নির্মল সেন, অক্টোবর ১৯৯৭ খ্রিঃ
‘এই সরকারের উচিৎ হবে কল্পনা চাকমার মত যারা হারিয়ে গেছে তাদের অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া, উচিৎ হবে সামরিক অভিযানের নামে সুদীর্ঘকাল আদিবাসীদের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, অরণ্যের ওপর যে নির্মম নির্যাতন হয়েছে তার একটা খতিয়ান তুলে ধরা। শান্তিচুক্তি শুধু নয়, অশান্তির উৎসকেও উপড়ে ফেলতে হবে।’
– আবেদ খান, জুন ১৯৯৯ খ্রিঃ
‘প্রত্য স্বাক্ষী প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের ধরা হচ্ছেনা। উপরন্তু শোনা যায় লেফট্যানেন্ট ফেরদৌসকে পদোন্নতি দিয়ে ঐ ক্যাম্প থেকে বদলি করা হয়েছে। প্রশ্ন জাগে আমরা কোন রাজ্যে বসবাস করছি? যেখানে নিজ বাড়ীতে থাকার পর্যন্ত নিরাপত্তা নেই।’ – কবিতা চাকমা, জুন ২০০০ খ্রিঃ
‘পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। দুর্গম পাহাড় ও অরণ্য ছাড়াও সম্পূর্ণ ভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে এর অবস্থান।’
-হ.জ.ম. হাসিবুশ শাহীদ, ফেব্র“য়ারি ২০০২ খ্রিঃ
ÔThese highlands of Bangladesh are inhabited by various Mongoloid tribes.These tribes people have been living in the CHT for a very long time.’
-Supriya Talukder, 2006
‘পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানীয় সরকার বা স্বশাসন ব্যবস্থার প্রর্বতন হয়েছে অনেক দেরীতে। কাজেই জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদকে স্বশাসন ব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে যদি পুরোপুরি গণমুখী ও কার্যকর করা যায়, তবে এসব প্রতিষ্ঠান এতদঞ্চলের উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অকদান রাখতে সম হবে।’
-জগৎ জ্যোতি চাকমা, এপ্রিল ২০০৬ খ্রিঃ
‘মাতৃভাষা শিক্ষায় শিতি হওয়ার অধিকার একটি মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার।’
– নিশান চাকমা, এপ্রিল ২০০৬ খ্রিঃ
‘বস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন ও আদিবাসী পাহাড়ীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের নামে যা কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে সবগুলো আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জাতীয় অস্তিত্ব, অর্থনীতি ও ভূমি অধিকারকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।’
-মুক্তা চাকমা, এপ্রিল ২০০৬ খ্রিঃ
‘সামাজিক অবকাঠামোর দিক থেকেও আমরা দিন দিন অবয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে অনুসরণ বা অধিক আধুনিকতার চর্চা রপ্ত করতে গিয়ে আজ আমাদের স্বকীয় ঐতিহ্য হুমকির সম্মুখীন। একটা জাতি বা সম্প্রদায়ের স্বকীয় বৈশিট্য অটুট রাখার রাকবচ তার আচরিত সংস্কৃতি।’
-আনন্দ মিত্র চাকমা, এপ্রিল ২০০৬ খ্রিঃ
‘বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বাঙালি জাতিসত্তার লোকসকলের প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে দিনে দিনে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা লুপ্ত হচ্ছে।–তাদের নানান বঞ্চনার মধ্যে সর্বজনীন শিার সুযোগের অভাব।’
-কুমার প্রীতীশ বল, এপ্রিল ২০০৬ খ্রিঃ
‘রাখাইন আদিবাসীদের জনগণের স্বার্থে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসার জন্য এবং বর্তমান সরবারের এই রাখাইন আদিবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
-উ. রাখাইন কায়েস, এপ্রিল ২০০৮ খ্রিঃ
‘পার্বত্য এলাকার অন্যান্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ইউএনডিপি কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে থাকলেও গুর্খাদের জন্য এখনো এক পয়সাও ব্যয় করে নি। আমি বিনয়ের সাথে যথাযথ কর্তৃপরে নিকট প্রয়োজনীয় পদপে নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাই।’
– মনোজ বাহাদুর, এপ্রিল ২০০৮ খ্রিঃ
‘আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে মাছচাষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সম। উপযোগী স্বল্পব্যয়ী ও পরিবেশবান্ধব মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উন্নয়ন প্রয়োজন ।’
-ড. মোহাঃ আখতার হোসেন, জুলাই ২০০৯ খ্রিঃ
‘পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি জেলার ভূ-সম্পদ, কৃষি সম্পদ, মৎস্য সম্পদ, বনজ সম্পদ, খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ উৎপাদন শক্তি এবং পর্যটন শিল্পের বিকশিত অবস্থায় জাতীয় সম্পদের সম্ভাবনাময় নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করবে যদি জুমিয়াদের পরিকল্পিত ভাবে সাংবিধানিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সুরা প্রদান করা যায়।’
-ডক্টর সেলু বাসিত, এপ্রিল ২০১০ খ্রিঃ
‘বিঝু আমাদের পার্বত্য জাতিস্বত্ত্বার একটি সামাজিক অনুষ্ঠান যা আমাদের নৃতাত্ত্বিক আদিবাসী জাতিস্বত্ত্বার ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করে থাকে। কিন্তু ২০১০ খ্রিঃ বিঝুটা একটু ম্লান হয়েছে, কারণ বাঘাইছড়ি ঘটনায় এতদঞ্চলের মানুষ কিছুটা হতবাক একটি স্বাধীন দেশের গণতান্ত্রিক সরকারকে কেন্দ্র করে।’
-মৃত্তিকা চাকমা, এপ্রিল ২০১০ খ্রিঃ
‘আমরা এখনো স্বপ্ন দেখি এক সুখী সুন্দর আবাস ভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামের। যেখানে থাকবে না কোন সংঘাত। অবশ্য এজন্য রাষ্ট্রকে পদপে নিতে হবে। আমরা রাষ্ট্রের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি।’
-মুকেশ চাকমা, এপ্রিল ২০১০ খ্রিঃ
‘পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তার ঝুঁকিতে জিইয়ে রেখেছে। চুক্তি পরবর্তী সময়ে পুনর্বাসিত সমতলবাসীদের দ্বারা আদিবাসী নারী নির্যাতনের হার বেড়েছে। ধর্ষনের শিকার আদিবাসী নারী শুধু শারীরিকভাবে বিধ্বস্ত হয়নি মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়েছে।’
– প্রফেসর মংসানু চৌধুরী, এপ্রিল ২০১০ খ্রিঃ
০৩. প্রাকৃতিক সম্পদ, আদিবাসীদের বিস্তৃতি এবং প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি
ঐতিহাসিক ও ভূতাত্ত্বিক বিশেষনে দেখা যায় য়ে, অনাদিকাল থেকেই যে কোন এলাকার জনবসতি গড়ে ওঠার পেছনে প্রভাবক হিসেবে বহুবিধ বিষয়ের মধ্যে প্রধানত: কাজ করেছে সেই এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদ ও পেশাগত সুযোগ-সুবিধার প্রাপ্যতার বিষয়টি। প্রাগৈতিহাসিক কালে প্রধানত: নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ব্যবসা-বানিজ্যের সুযোগ-সুবিধাকে সামনে রেখে তেমনি ভাবে গড়ে ওঠেছে শহর-বন্দর, হাট-বাজার নদ-নদী কিংবা সাগর-উপসাগরের পাশ্ববর্তী এলাকাতে। আবার কৃষিভিত্তিক সমাজ বা গোত্র গড়ে ওঠেছে কৃষি সংপৃক্ত সম্পদকে সামনে রেখে যাতে করে জীবন ধারণের অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে এই কৃষিকে প্রধানতম পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের বিস্তৃতিও তেমনি ভাবে প্রধানত: কৃষিজ, বনজ, জলজ, মৎস্যজ, পশুপাখি শিকার ইত্যাদি নানাবিধ সুযোগ-সুবিধাকে সামনে রেখেই ঘটেছে। আবার তাদের সাথে সাম্প্রতিক সময়ের পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতও তেমনি এইসব প্রাকৃতিক সম্পদগত অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতা থেকেই জোরদার হয়েছে।
০৩.০১. পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সম্পদ
চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সম্পদ সৃষ্টিকর্তার অবারিত দান যাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমৃদ্ধির পথ সুপ্রসস্ত করা মোটেই কষ্টসাধ্য নয়। ভূতাত্ত্বিক জরীপের তুলনায় সম্পদ ভিত্ত্বিক জরীপে এখানে প্রাকৃতিক সম্পদ অনেক বেশি থাকায় এখানে উন্নয়ন সম্ভাব্যতাও অনেক বেশি। পাহাড়ের ঢালু এলাকার জায়গা কৃষি ও বনায়নে যেমনি সমৃদ্ধ ভূমিকা রেখে আসছে তেমনি স্রোতধারা বহুল পাহাড়ি নদীও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সবল ভূমিকা রাখতে পারে, তেমনি ভাবে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতেও সমৃদ্ধ ভূমিকা রাখতে পারে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকার লেইক আর পুকুর-দিঘীর জলাশয়।
সাম্প্রতিক এক তথ্যে জানা যায় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট ১৩,১৮১ বর্গ কি.মি. এলাকায় কৃষি-ভূমি বর্তমানে ০৫ শতাংশ এবং অকৃষি ভূমি ৯৫ শতাংশ যেখানে কৃষি ও বনায়ন সম্প্রসারণের যৌক্তিক সুযোগ রয়েছে। আরেক তথ্যে জানা যায় যে, পার্বত্য চ্টগ্রামে বন আচ্ছাদিত ভূমি ২৯,০২,৭৩৯ একর; কৃষি-অনুপযোগী ভূমি ২,৭০,৯৮১ একর; পতিত কৃষি-উপযোগী ভূমি ৪৫,০০০একর; কৃষিভূক্ত ফসলী ভূমি ১,৩০,০০০একর; পতিত ভূমি ১,০৮,০০০একর; নিচু জাতু ফসলী ভূমি ৯৩,০০২ একর; চাষভূক্ত মোট ভূমি ২,২৩,০০২ একর যার সর্বমোট আয়তন ৩২,৫৯,৫২০ একর।
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি পার্বত্য জেলার মোট ৭,০৪৪ বর্গ কি.মি. বনাচ্ছাদিত এলাকা যার মধ্যে প্রায় ১,৫৩৯ বর্গ কি.মি. এলাকা সংরতি বন এলাকা এবং প্রায় ৫,৪৫৩ বর্গ কি.মি. অশ্রেণীভূক্ত রাষ্ট্রীয় বনাঞ্চল যেখানে তাবৎ বৃরাখি উজাড় হয়ে এখন আছে ঝোপঝাড় বহুল বনভূমি। পার্বত্য উত্তÍর এলাকার প্রায় ৩৩,৭৪০ বর্গ কি.মি. গভীর অরণ্যে মূল্যবান চাপালিস, তেলসুর, নাগেস্বর, গর্জন, সিভিট ইত্যাদি বৃাদি জন্মে থাকে। পার্বত্য দণি এলাকার বনভূমিতে জন্মে কদম, শিমুল, খাগড়া, চম্পা, চিকরাশী, বাঁশ, শন, গলাতে ইত্যাদি। এখানকার বন্যহাতি, বন্যপ্রাণি, পাখি, এবং ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমৃদ্ধ ভূমিকা রাখতে পারে। সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে ৬টি ও বান্দবানে ৪টি রাবার বাগান আছে এবং আরো কয়েকটি রাবার বাগান তৈরির কাজ এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে ২৩,১৯৬ একর কাঠ উৎপাদনের লক্ষ্যে বৃক্ষায়ন করা হয়েছে এবং ৬,৩১৮ একর জমিতে কাগজের মন্ড তৈরির লক্ষ্যে নরম কাঠের উৎপাদন কার্যক্রম চলছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর সম্ভাবনাময় মৎস্য ও জলজ সম্পদও রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনায় আর আংশিক কিংবা পুরোপুরি অব্যবহৃত অবস্থায়। মানব সৃষ্ট কাপ্তাই লেইক ৪৪ বর্গ কি.মি. বা ৬৮,৮০০ হে. এবং ছোটবড় ২০,০০টি পুকুর যার আয়তন প্রায় ১,০০০ একর যাতে উন্নত লাগসই পরিবেশ বান্ধব চাষ ব্যবস্থাপনার মাছের বর্তমান উৎপাদনকে বহুগুণে বাড়ানোর সম্ভাব্যতা রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে কর্ণফুলী, মাতামুহুরী, সাঙ্গু, কাসালং ইত্যাদি পাহাড়ি খড়স্রোতা নদী যেখানে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রচুর সম্ভাবনাও রয়েছে এবং এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো অত্যাবশ্যক।
পার্বত্য চট্টগ্রামের খনিজ সম্পদ এখনো প্রায় পুরোটাই অনাস্কিৃত ও অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। এখানকার ভূতাত্ত্বিক অবস্থা ও পরিবেশ-পরিস্থিতি প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তৈল, চুনাপাথর, কঠিন শিলা ইত্যাদি মূল্যবান খনিজ সম্পদ আহরণের সম্ভানাকে কাজে লাগাতে পারলে আমাদের দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হতে পারে। এযাবৎ খাগড়াছড়ির সামুটাঙ্গ নামক স্থানে উন্নতমানের মিথেন সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া গছে যার আহরণযোগ্য মজুদ প্রায় ০.১৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। রাঙ্গমাটির কাপ্তাই ও বান্দরবানের আলী কদমে কঠিন শিলার সন্ধান পাওয়া গেছে যার সম্ভবনাও অনেক এদেশের সমৃদ্ধি আনয়নের ক্ষেত্রে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় অব্যবহৃত কৃষিজ, বনজ, খনিজ, জলজ ইত্যাদি সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সম্পদকে দক্ষ ও পরিকল্পিত ভাবে লাগসই পরিবেশবান্ধব উপায়ে কাজে লাগিয়ে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ভিত্তিক উৎপাদন বাড়িয়ে আর্থ-সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমৃদ্ধি তরান্বিত করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি সম্পদের যৌক্তিক ন্যায়সঙ্গত বন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি-বাঙালিদের সংকট নিরসনের মাধ্যমে সুখি-সমৃদ্ধ শান্তির জনপদ সৃষ্টিও সম্ভব।
০৩.০২. পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের বিস্তৃতি
পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের ১০টি ভাষাভাষী ১৩টি নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী ভিত্তিক প্রায় ১০ লাখ আদিবাসীর বিস্তৃতি মোটামুটি ভাবে তিনটি জেলাতেই দেখা যায় যা থেকে তাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন সময়ে পাহাড়ি এলাকায় বাঙালিদের অভিবাসন যেমনি সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটায় তেমনি পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতও জোরদার হতে থাকে। আনুপাতির বৃদ্ধি যথাক্রমে- পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী ও বাঙালির অনুপাত ১৯৪৭ সনে ৯৭.৫ : ২.৫, ১৯৫১ সনে ৯৪:৬, ১৯৬১ সনে ৮৮:১২, ১৯৭৪ সনে ৭৭:২৩, ১৯৮১ সনে ৫২:৪২, ১৯৯১ সনে ৫১:৪৯ এবং বর্তমানে এই অনুপাত সমান সমান হতে পারে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের মধ্যে চাকমাদের বসত রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান ঝেলার বিভিন্ন এলাকায়; মারমাদের বসত রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন এলাকায়; ত্রিপুরাদের বসত রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন এলাকায়; তঞ্চঙ্গাদের বসত রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন এলাকায়; লুসাইদের বসত রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন এলাকায়; পাংখোয়াদের বসত রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন এলাকায়; বমদের বসত রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন এলাকায়; ম্রোদের বসত রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন এলাকায়; খুমিদের বসত বান্দরবান জেলার বিভিন্ন এলাকায়; চাকদের বসত বান্দরবান জেলার বিভিন্ন এলাকায়; খেয়াংদের বসত রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন এলাকায় এবং সাঁওতাল ও গুর্খাদের বসত রাঙ্গামাট ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন এলাকায়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা ভিত্ত্কি বিস্তৃতির কিছুটা ধারণা দেয়া যেতে পারে যা থেকে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও সামাজিক রীতিনীতির একটা সাদামাটা ধারণা পাওয়া যাবে। বিগত কয়েক মত বছরের নানাবিধ সংকট আর সমস্যার প্রেক্ষিতে এই সংখ্যা স্থান ভিত্তিক কমবেশি হতে দেখা যায়।
বিগত ১৮৭১ সনে বৃটিশ শাসন ব্যবস্থায় অত্যন্ত সাহসী, সৎ ও বিশ্বাসী গুর্খা সম্প্রদায় পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় পূনর্বাসিত হয়ে হাজার প্রতিকুলতায় জীবন যাপন করছে। আমার প্রশ্ন এই গুর্খা জাতিগোষ্ঠীকে আমরা আদিবাসী বলে চিহ্নিত করবো কিনা এবং করলে আদিবাসীদের সাথে এদের কোন সংঘাত সৃষ্টি হবে কিনা এবং হলে এর সমাধানইবা কি হতে পারে।
রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন এলাকায় চাকমা ১৪১৫৯৫ জন, মারমা ৩৩৬৬৮ জন, ত্রিপুরা ৫৩৪২ জন, মুরং ১৭৬ জন, তঞ্চঙ্গা ১০৬৬১ জন, বম ১১৬ জন, রিয়াং ৪০০ জন, পাংখো ১৬৬৮ জন, খিরাং ৮২৭ জন এবং লুসাই ৬৫৩ জন আদিবাসীর বসত রয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন এলাকায় চাকমা ৯৬৫৯৫ জন, মারমা ৪৬১৬৮ জন, ত্রিপুরা ৪৬৪৪২ জন এবং রিয়াং ২০৩৪ জন আদিবাসীর বসত রয়েছে। বিস্তারিত ভাবে মাঠ জরিপ করা গেলে এই সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা যায়। বান্দরবান জেলার বিভিন্ন এলাকায় চাকমা ৩৪২৬ জন, মারমা ৫১৩৯৪ জন, ত্রিপুরা ৬৬৭১ জন, মুরং ১৬৯৯২ জন, তঞ্চঙ্গা ৫৪৭৯ জন, বম ৫৪৬৮ জন, খিয়াং ৫০১ জন, খুমি ১০৯১ জন, চাক ৭৯৮ জন এবং লুসাই ১৬ জন আদিবাসীর বসত রয়েছে। একই সাথে রয়েছে সাঁওতাল ও গুর্খাদের কিছ সংখ্যক বসতি।
০৩.০৩. আদিবাসীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি
০৩.০৩.০১. আদিবাসী শিশু ও কিশোর-কিশোরী এবং নারী উন্নয়ন
আদিবাসী শিশু ও কিশোর-কিশোরী এবং নারীদের সার্বিক বিকাশ, নিরাপত্তা এবং জীবনযাত্রার উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবিধানের ১৭, ১৮, ২৭, ২৮ ও ৩৪ ধারায় বহুবিধ অনুকুল নীতি-নির্দেশনার উল্লেখ করা আছে যার সূষ্ঠু বাস্তবায়ন ঘটলে বাস্তব অবস্থার প্রত্যাশিত উন্নয়ন জোরদার হতে পারতো।
১৭ ধারার তিনটি অনুচ্ছেদে সকল শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক এবং সার্বজনীন শিক্ষা সুযোগের নিশ্চয়তার কথা বলা থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা অনেক ক্ষেত্রেই প্রত্যাশিত মাত্রায় তা পায়না।
১৮ ধারার দুইটি অনুচ্ছেদে সকল শিশু ও কিশোর-কিশোরী এবং নারী সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণের পুষ্টির উন্নয়ন জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনের কথা বলা থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা অনেক ক্ষেত্রেই প্রত্যাশিত মাত্রায় তা পায়না তেমনটাই জানা যায় আদিবাসী দের কাছ থেকে।
২৭ ধারায় সকল নাগরিক আইনের র্দষ্টিতে সমান ও আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী একথা বলা থাকালেও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার কাছে তা পায়না।
২৮ ধারার প্রথম তিনটি অনুচ্ছেদে ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে সকল নাগরিকের সমান সুযোগ-সুবিধার কথা এবং চতুর্থ অনুচ্ছেদে নারী বা শিশুদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধানের কথা বলা থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা অনেক ক্ষেত্রেই তা পায়না বলে জানা যায়।
৩৪ ধারার তিনটি অনুচ্ছেদে সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে শিশুদের অদিকারকে বিশেষ ভাবে সংরণের কথা বলা থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা অনেক ক্ষেত্রেই প্রত্যাশিত মাত্রায় তা পায়না তেমনটাই জানা যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী দের কাছ থেকে।
বালাদেশ সরকার বিশেষ করে আদিবাসীদের অধিকার, শিক্ষা সুযোগ বৃদ্ধি, বৈষম্য কমানো, রাষ্ট্রের অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিতকরণে-
(১) সকল বর্ণ বৈষম্য দূরীকরণে আন্তর্জাতিক সনদ, ১৯৬৫, (২) অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সনদ, ১৯৬৬, (৩) নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত সকল বৈষম্য দূরীকরণে আন্তর্জাতিক সনদ, ১৯৭৯, (৪) জাতিসংঘ শিশু সনদ,১৯৮৯ এবং (৫) জাতিসংঘ ৪র্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনের বেইজিং ঘোষনা ও কর্মপরিকল্পনা, ’৯৫ সমূহের প্রতি সমর্থন প্রদান করে থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী শিশু ও কিশোর-কিশোরী এবং নারী সমাজের সার্বিক উন্নয়নে এসব ঘোষনা ও প্রস্তাবনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ঘটেনি তেমনটিই জানা যায়।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবিথানের আলোকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রনীত ও কার্যকর শিশু ও কিশোর-কিশোরী এবং নারী উন্নয়ন সংশিষ্ট আইন সমূহের মধ্যে সার্বিক অবস্থার উন্নয়নে অত্যাবশ্যক-
(১) শিশু আইন, ১৯৭৪; , (২) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এবং (৩) শ্রম আইন, ২০০৬ কতিপয় সংশিষ্ট ধারা-উপধারার কার্যকর বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী শিশু ও কিশোর-কিশোরী এবং নারী উন্নয়নে এসবের অনেকাংশেই বাস্তবায়ন ঘটেনি বলে জানা যায়।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাস্তবায়নাধীন সার্বজনীন সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প’-দুই এ আদিবাসী শিশুর শিক্ষায় উন্নয়নে–
(১) প্রাথমিক শিক্ষায় স্থানীয় এবং আদিবাসী ভাষা জানা আদিবাসী শিক নিয়োগ, (২) নিয়োগকৃত শিকদের প্রশিণ দেয়া, (৩) প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন এবং মাতৃভাষায় শিক্ষাদান, (৪) পাঠ্যসূচিতে আদিবাসী সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সংযুক্ত করা, (৫) বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং নতুন বিদ্যালয় স্থাপন করা, (৬) স্কুল ব্যবস্থাপনায় আদিবাসী অভিবাবকদের সংপৃক্ত করা, (৭) স্কুলের পাঠক্রম তত্ত্ববধান এবং পযৃবেণ করা এবং (৮) স্থানীয় পরিস্থিতির সঙ্গে মানান সই স্কুল পঞ্জিকা প্রচলন ইত্যাদির কথা বলা থাকলেও তা পূরন হয়নি বিধায় আদিবাসী শিশু ও কিশোর কিশোরীরা শিায় পিছিয়ে পড়ে।
Ñ ১৯৯৭ সনের শান্তিচুক্তির ৩৩/খ-২ ধারায় মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের কথা বলা হলেও এবং জাতীয় শিা কমিশন (মনিরুজ্জামান ২০০৩) রিপোর্টে আদিবাসী শিশুর শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধিতে ধাপে আপে ১০০ বিদ্যালয় স্থাপনের কথা থাকলেও বাস্তবে এর কোনটাই পুরোপুরি কার্যকর ভাবে পূরণ হয়নি।
Ñ ১৯৯৭ সনের শান্তিচুক্তি এবং ‘পার্বত্য জেলা স্থাণীয় সরকার পরিষদ’ আইন ১৯৮৯ এর সংশিষ্ট ধারা অনুযায়ী শিশু ও নারীর সামাজিক নিরাপত্তা, সম্পদে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ সার্বিক উন্নয়ন আজো নিশ্চিৎ হয়নি।
০৩.০৩.০২ আদিবাসীদের নিরাপত্তা বিধান, মর্যাদা ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন
পাহাড় আর পাহাড়ি বন, পাহাড়ি ঝর্ণা আর সরুনদী এবং পাহাড়ের অনন্য নৈসর্গিক সৌন্দর্যে শোভিত প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ পার্বত্য চট্টগ্রাম। ১৯৯১ সনের আদমসুমারী অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৩,২৯৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মোট জনসংখ্যা ৯,৭৪,৪৪৫ জনের মধ্যে আদিবাসী বা উপজাতীয় ৫,০১,১৪৪জন এবং সাম্প্রতিক বসতী অ-উপজাতীয় বা বাঙালির সংখ্যা ৪,৭৩,৩০১জন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বন আচ্ছাদিত ভূমি ২৯,০২,৭৩৯ একর; কৃষি-অনুপযোগী ভূমি ২,৭০,৯৮১ একর; পতিত কৃষি-উপযোগী ভূমি ৪৫,০০০একর; কৃষিভূক্ত ফসলী ভূমি ১,৩০,০০০একর; পতিত ভূমি ১,০৮,০০০একর; নিচু জাতু ফসলী ভূমি ৯৩,০০২ একর; চাষভূক্ত মোট ভূমি ২,২৩,০০২ একর যার সর্বমোট আয়তন ৩২,৫৯,৫২০ একর।
মানব সৃষ্ট কাপ্তাই কাপ্তাই লেইক ৪৪ বর্গ কি.মি. বা ৬৮,৮০০ে হে. এবং ছোটবড় ২০,০০টি পুকুর যার আয়তন প্রায় ১,০০০ একর। পার্বত্য চট্টগ্রামের খনিজ সম্পদ এখনো প্রায় পুরোটাই অনাবিস্কৃত ও অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। খাগড়াছড়ির সামুটাঙ্গ নামক স্থানে উন্নতমানের মিথেন সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া গছে যার আহরণযোগ্য মজুদ প্রায় ০.১৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। রাঙ্গমাটির কাপ্তাই ও বান্দরবানের আলী কদমে কঠিন শিলার সন্ধান পাওয়া গেছে যার অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও অনেক।
পেশার দিক থেকে প্রায় সকল আদিবাসীরাই পাহাড়ি প্রাকৃতিক সম্পদ সংশিষ্ট বৃহৎ অর্থে কৃষিকাজে জড়িত। আবার কেউ কেউ কৃষি শিল্প ব্যবসায় জড়িত আবার কেউ কেউ আধুনিক শিক্ষার বদৌলতে সরকারি-বেসরকারি চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। জীবন-জীবিকা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে প্রত্যেক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীই কমবেশি স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে নিজ নিজ কৌশলে জীবন ধারণ ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে।
প্রকৃতি ও প্রশাসনিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক, সম্পদ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার বহুবিধ অব্যবস্থাপনা, অদ ও দূর্বল পরিকল্পনা, নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকার পরিচালকদের পপাত মূলক র্দষ্টিভঙ্গি, দলীয় ও সাম্প্রদায়িক আদিপত্তবাদ ইত্যাদি নানাবিধ কারণে পার্বত্র চট্টগ্রামের ১৩টি নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী আর্থ-সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে থেকে জীবন কাটাচ্ছে কষ্টে-সংকটে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৩টি আদিবাসী নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর ধর্মীয়-সামাজিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংরণ ও বিকাশ, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, প্রাকৃতিকসহ সকল সম্পদে যৌক্তিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ভোগের অধিকার, শিক্ষা-প্রশিণ ও পেশাগত অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ সার্বিক ভাবে জীবনযাত্রার উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবিধানের ১৮, ২৭, ২৮, ৩৪ ও ৩৮ ধারায় বহুবিধ অনুকুল নীতি-নির্দেশনার উলেখ করা আছে যার সূষ্ঠু বাস্তবায়ন ঘটলে বাস্তব অবস্থার প্রত্যাশিত উন্নয়ন জোরদার হতে পারতো।
১৮ ধারার দুইটি অনুচ্ছেদে সকল শিশু ও নারী সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণের পুষ্টির উন্নয়ন জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনের কথা বলা থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা অনেক েেতই প্রত্যাশিত মাত্রায় তা পায়না তেমনটাই জানা যায় আদিবাসীদের কাছ থেকে।
২৭ ধারায় সকল নাগরিক আইনের র্দষ্টিতে সমান ও আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী একথা বলা থাকালেও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা অনেক েেতই সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার কাছে তা পায়না।
২৮ ধারার প্রথম তিনটি অনুচ্ছেদে ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে সকল নাগরিকের সমান সুযোগ-সুবিধার কথা এবং চতুর্থ অনুচ্ছেদে নারী বা শিশুদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধানের কথা বলা থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা অনেক েেতই তা পায়না বলে জানা যায়।
৩৮ ধারার নাগরিক অধিকার অনুচ্ছেদে অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সকল নাগরিকের সমান নাগরিক অধিকার সংরণের কথা বলা থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা অনেক েেতই প্রত্যাশিত মাত্রায় তা পায়না ।
আন্তর্জাতিক সনদ ও ঘোষনার বাস্তবানে বালাদেশ সরকার বিশেষ করে আদিবাসীদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, সামাজিক ও সম্পদগত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, নৃতাত্ত্বিক জাতি-গোষ্ঠী ভেদে বৈষম্য কমানো, রাষ্ট্রের অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিতকরণে সম্মত হয়ে স্বার করলেও বাস্তবে এসবের পুরোপুরি বাস্তবায়ন ঘটেনি। যেমন-
(১) সকল বর্ণ বৈষম্য দূরীকরণে আন্তর্জাতিক সনদ, ১৯৬৫, (২) অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সনদ, ১৯৬৬, (৩) আন্তর্জাতিক আই এল ও কনভেনশন, ১৯৮৯ এবং
(৪) জাতিসংঘ ৪র্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনের বেইজিং ঘোষনা ও কর্মপরিকল্পনা, ’৯৫ ।
বালাদেশ সরকার রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন, বিধি-বিধান, পার্বত্য নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর সাথে সম্পাদিত চুক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে আদিবাসীদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, সামাজিক ও সম্পদগত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, নৃতাত্ত্বিক জাতি-গোষ্ঠী ভেদে বৈষম্য কমানো, রাষ্ট্রের অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিতকরণে সম্মত হয়ে স্বার করলেও বাস্তবে এসবের পুরোপুরি বাস্তবায়ন ঘটেনি। যেমন-
(১) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর কতিপয় সংশিষ্ট ধারা-উপধারার কার্যকর বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসদের সার্বিক উন্নয়নে এসবের অনেকাংশেই বাস্তবায়ন ঘটেনি বলে জানা যায়।
(২) শ্রম আইন, ২০০৬ এর কতিপয় সংশিষ্ট ধারা-উপধারার কার্যকর বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসদের সার্বিক উন্নয়নে এসবের অনেকাংশেই বাস্তবায়ন ঘটেনি বলে জানা যায়।
(৩) ১৯৯৭ সনের শান্তিচুক্তি এর সংশিষ্ট ধারা অনুযায়ী মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, সামাজিক ও সম্পদগত অধিকার নিশ্চিতকরণ, নৃতাত্ত্বিক জাতি-গোষ্ঠী ভেদে বৈষম্য কমানো, রাষ্ট্রের অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিতকরণ, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয নিরাপত্তা বিধান, সম্পদ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ সার্বিক উন্নয়ন আজো নিশ্চিৎ হয়নি।
(৪) ‘পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ’ আইন ১৯৮৯ অনুযায়ী আদিবাসীদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, আর্থসামাজিক ও সম্পদগত নিরাপত্তা, জাতি-গোষ্ঠী ভেদে বৈষম্য কমানো, অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিতকরণে শিশু ও নারীর সামাজিক নিরাপত্তা, সম্পদে ও সিদ্ধান্ত গ্রহনে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ আদিবাসীদের উন্নয়ন নিশ্চিৎ হয়নি।
(৫) আদিবাসীদের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালি ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি স্থাপনের মাধ্যমে দু’পরে সংঘাতের অবসান ঘটানোর প্রক্রিয়া কিছু ভূমিদস্যুর প্ররোচনায়, বিগত সরকারের চুক্তি বিরোধী মনোভাব, উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী চক্রান্ত এবং সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে মুখ থুবরে পড়ে আছে। ফলে আদিবাসীদের সার্বিক নিরাপত্তা, শিক্ষা-সংস্কৃতি, পেশাগত কার্যক্রম, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ইত্যাদি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে দারুণ ভাবে।
০৪. পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান সংকট ও সমাধানের কৌশলপত্র
০৪.০১. পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান সংকট
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অজর্ন যেমনি এদেশের মানুষকে নতুন এক স্বপ্নে দেশ গড়ার কাজে উৎসাহ জুগিয়েছে তেমনি ভাবেই আদিবাসী-বাঙালির মাঝে কিছু ভূমিদস্যু সামাজিক-রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে সৃষ্ট সংঘাত জাতীয় আর্থসামাজিক উন্নয়নকে করেছে বাধাগ্রস্থ
১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সন এই এক দশকে সামরিক কৌশলে জাতিগত সংঘাত দমনের সুযোগে কিছু অতি উৎসাহী চরিত্রহীন সম্পদলোভী বাঙালি পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত কতিপয় সেনা সদস্যের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে কোথাও কোথাও আদিবাসীদের ভূমি ও সম্পদ দখল, খুন-ধর্ষনের মতো অমানবিক কাজে জড়িয়ে পড়লে আদিবাসী জনগোষ্ঠীও জন সংহতি সমিতির নেতৃত্বে স্বসস্ত্র প্রতিরোধের পথ বেছে নেয়। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ সন এই সময়ে আদিবাসী ও সরকারি ভাবে পূনর্বাসিত বাঙালিদের মাঝে সৃষ্ট সংঘাত আরো জোবদার হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পরিনত করে এক জনযুদ্ধ বহুল অস্থির অনিরাপদ জনপদে।
দেশে বর্তমানে চাষযোগ্য জমির পরিমান মাথাপিছু যেখানে ০.২২ একর সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেখানে মাথাপিছু জমির পরিমাণ মাত্র ০.১৪একর। অথচ শান্তিচুক্তি বিরোধী কিছু রাজনৈতিক দলের এবং কিছু অতি উৎসাহী মেকী দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীর অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে দেশের সমতলীয় জেলা থেকে প্রতি নিয়ত কিছু লোকের অনুপ্রবেশ ঘটার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি ও জাতিগত সংকট তীব্রতর হয়ে উঠতে থাকে। কিছু কিছু অতি উৎসাহী মানবিক মূল্যবোধহীন সেনা সদস্য ও ভূমি প্রশাসনের দুর্নীীতর কারণে যেমনি নবাগতদের উৎসাহ যোগাচ্ছে তেমনি চলমান সংকটও তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠতে থাকে। পাশাপাশি কিছু কিছু সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ও বুদ্ধিজীবীর উস্কানিতে কলমপতি, লংগদু মাল্যা, লোগাং, নালিয়ারচর, এবং লংগদু তিনটিলা আদিবাসী গণহত্যার মতো বর্বর ঘৃণ্যতম মানব হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়।
এমনি নাজুক অস্থির সংঘাতময় পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতিতে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের নির্বাচনী অঙ্গীকারে ১৯৯৬ সনে বাংলাদেশ আওয়ামী এদেশের সরকার গঠন করার পর ১৯৯৭ সনের ২ জুন ভূমি ও জাতিগত সংঘাতের যৌক্তিক স্থায়ী সমাধান কল্পে জন সংহতি সমিতি (জে এস এস) ও বাংলাদেশ সরকারের মাঝে শান্তিচুক্তি স্বারের পর আদিবাসী -বাঙারি সংঘাতের অবসানের নবদিগন্ত সূচিত হয়। পরবর্তীতে ২০০১ সনে চার দলীয় জোট সরকার মতায় এলে শান্তিচুক্তির শান্তি প্রক্রিয়া কেবল মুখ থুবড়েই পড়েনা বরং মৌলবাদী ভূমিদস্যু নেতৃত্ব পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালিদের উস্কে দিয়ে সংঘাতের আগুনকে আরো বাড়িয়ে দেয়। ফলে পাহাড়ে পূনর্বাসিত বাঙালিরা পাহাড়ি ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ দখলের নেশায় এবং আদিবাসীরা তাদের পুরুষাক্রমিক দখলে থাকা পাহাড়ি ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ নিজেদের দখলে রাখার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়লে উভয় পক্ষ্যে প্রচুর লোকয়ের ঘটনা ঘটতে থাকে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান সংকটের একটি তালিকা করতে গেলে তা এতাটাই বড় হবে যে, সেই সংকটের তালিকাতেই একটা পুরো বই হয়ে যাবে যা এই সময়ে আমার পে সম্ভব নয়। তাই অতি গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় চলমান সংকট সংশিষ্ট সকলের সদয় দৃষ্টি আকর্ষনার্থে উপস্থাপন করা হলো।
(১) পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী ও পূনর্বাসিত বাঙালির সংঘাতে উভয় পরে জনগণের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাহীনতা সামগ্রীক আর্থসামাজিক উন্নয়নকে ব্যাহত করছে।
(২) আদিবাসী-বাঙালি সংঘাতময় পরিবেশে ১০টি ভাষাভাষী ১৩টি আদিবাসী নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর ধর্মীয়-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠানাদি কোথাও পুরোপুরি আবার কোথাওবা আংশিক বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
(৩) পর্যাপ্ত বিদ্যালয় ও উপযুক্ত শিকের অভাব, আদিবাসী ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা সুযোগের অভাব, আদিবাসী শিকদের প্রতি শিা প্রশাসনের বৈষম্যমূলক আচরণ, মানানসই স্কুল পঞ্জিকা ও আদিবাসীদের শিক্ষা সচেতনতার অভাব, বাঙালি শিার্থীদের বন্ধুত্বসূলভ আচরণ ও অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, আদিবাসী শিক্ষার্থীদের শিশুশ্রমে নিয়োজিত থাকা, পাঠ্য বইয়ে আদিবাসী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের অভাব ইত্যাদি কারণে আদিবাসী শিশুদের শিক্ষায় অনগ্রসরতায় মানব সম্পদ উন্নয়নের কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।
(৪) পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে গঠিত ভূমি কমিশন এর কার্য পরিচালনার জন্যে ২০০১ সনে যে আইন করা হয় এর অন্ততঃ ১৯টি ধারা সম্পাদিত শান্তিচুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হয়ে তা আরো জটিলতর হবার আশংকাতে চুক্তি বাস্তবায়ন বিঘ্নিত হচ্ছে।
(৫) আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জাতিসংঘ এর সংশিষ্ট আন্তর্জাতিক সনদ ও ঘোষনা, বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮, ২৭, ২৮, ৩৪ ও ৩৮ এবং অন্যান্য অনুচ্ছেদসহ পুরো সংবিধান, পার্বত্য চট্টগ্রাম চলমান সংঘাত ও এর সমাধানে প্রযোজ্য সংশিষ্ট বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন আইন ও বিধিবিধান, ‘পার্বত্য জেলা স্থাণীয় সরকার পরিষদ’ আইন ১৯৮৯ -র সকল ধারা ও উপধারা,পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তিতে অন্তর্ভূক্ত সকল ধারা-উপধার ইত্যাদি সংশিষ্ট সকরের জানা না থাকায় সৃষ্ট বিভ্রান্তি আদিবাসী ও বাঙালির বিরোধ নিষ্পত্তি বিঘ্নিত হচ্ছে।
(৬) কাপ্তাই লেইক প্রকল্প বাস্তবায়নে তিগ্রস্তদের যৌক্তিক তিপূরণ না দেয়া এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সমাজভিত্তিক অংশগ্রহণ মূলক সূফলভোগী না করায় জনমনে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা প্রদানে অনীহা পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।
(৭) কিছু সামাজিক-রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও ভূমিদস্যু স্বার্থান্বেষী ইন্দনদাতার চক্রান্ত ও প্ররোচনায় পার্বত্য চট্টগ্রামে পূনর্বাসিত সমতলীয় বাঙালি এবং আদিবাসীরা নিজেদের বাংলাদেশের নাগরিক স্বত্ত্বার চেয়ে অতিমাত্রায় জাতিস্বত্ত্বাকে প্রাধান্য দেয়ার উভয়ের মাঝে সহনশীলতা, সহমর্মীতা ও শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টির অভাবে আদিবাসী ও বাঙালির বিরোধ নিষ্পত্তি বিঘ্নিত হচ্ছে।
(৮) পার্বত্য চট্টগ্রামের তুলনামূলক সরল ও শিক্ষায় অনগ্রসর ভাষিক সমস্যার সম্মুখীন আদিবাসীদের আইনশৃংখলা বাহিনী, সামরিক ও বেসরকারি প্রশাসন, দাতা ও স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থার কাছে তাদের সমস্যাদি তুলে ধরার প্রবেশাদিকার খুবই সীমিত থাকায় এবং কোথাওবা পপাতিতায় আদিবাসী ও বাঙালির বিরোধ নিষ্পত্তিসহ সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে।
(৯) পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ, পূনর্বাসিত সমতলীয় বাঙালি এবং আদিবাসীদে নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর বিস্তৃতি ও পরিসংখ্যান, ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কৃতি, শিক্ষা ও পেশাগত অবস্থা, জীনযাত্রাও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদির কার্যকর গবেষনালব্ধ তথ্যাদির অভাবে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তায়ন সমস্যায় আদিবাসী ও বাঙালির বিরোধ নিষ্পত্তিসহ সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে।
(১০) পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কশিশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদ, আইনশৃংখলা রায় নিয়োজিত পুলিশ ও পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনী, রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রশাসন, দাতা সংস্থা ও সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সমূহের কার্যক্রমে কার্যকর সমন্নয়ের অভাবে আদিবাসী ও বাঙালির বিরোধ নিষ্পত্তিসহ সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে।
০৪.০২. সংকট সমাধানের কৌশলপত্র
পার্বত্য চট্টগ্রামে চাষযোগ্য কৃষি ভূমির পরিমান কম থাকলেও অন্যান্য অর্থনৈতিক ভাবে গুরুত্ব সম্পন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমান অনেক বেশি থাকায় ঐসব সম্পদ দখল ও ভোগের অনেকটা অযৌক্তিক প্রতিযোগিতায় এবং যথাযথ লাগসই পরিবেশবান্ধব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অভাবে সেখানে ভূমি ও জাতিগত সংঘাতও অনেক বেশি। আমি সেইসব সংকটের মাঝ থেকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় ১০টি সংকটের কথা অনুচ্ছেদ ০৪.০১ এ তুরে ধরেছি। তাই কৌশলপত্র বলি আর অন্য যাই কিছু বরিনা কেনো উপস্থাপিত এই দশটি সমস্যার কারণ ও উৎস বিশেষণ করে নিরপে দৃষ্টিকোণ থেকে নিজেদের দায়িত্বশীল বিচারকের ভূমিকায় উপস্থাপিত রেখে কার্যকর বাস্তব ভিত্তিক উপায় বের করাই সংকট সমাধানের কৌশলপত্র। পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান ভূমি ও জাতিগত সংকট সমাধানের কৌশলপত্রের সারসংপে নিম্নে উপস্থাপন করা হলো।
(১)পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী ও পূনর্বাসিত বাঙালি উভয় পরে জনগণের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিধান করা।
(২) আদিবাসী ১০টি ভাষাভাষী ১৩টি নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর ধর্মীয়-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠানাদি নির্বিঘেœ-নির্বিবাদে পালনের নিশ্চয়তা বিধান করা।
(৩) পর্যাপ্ত বিদ্যালয়ে দ শিকের দ্বারা আদিবাসী ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা সুযোগ সৃষ্টি ও আদিবাসী শিকদের প্রতি শিক্ষা প্রশাসনের বৈষম্যহীন আচরণ, মানানসই স্কুল পঞ্জিকা ও পাঠ্য বইয়ে আদিবাসী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের সংযোজন ইত্যাদির মাধ্যমে শিতি আদিবাসী মানব সম্পদ উন্নয়ন সাধন করা।
(৪) পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে গঠিত ভূমি কমিশন এর কার্য পরিচালনায় ২০০১ সনে প্রনীত আইনের সাংঘর্ষিক ১৯টি ধারার কার্যকর সংশোধন করে এসবের কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিৎ করা।
(৫) জাতিসংঘের সংশিষ্ট আন্তর্জাতিক সনদ ও ঘোষনা, বাংলাদেশের সংবিধানের সংশিষ্ট অনুচ্ছেদ সমূহ, পার্বত্য চট্টগ্রাম সংশিষ্ট বাংলাদেশ সরকারের আইন ও বিধিসমূহ, ‘পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ’ আইন ১৯৮৯ ,পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ধারা-উপধার ইত্যাদি সংশিষ্ট সকলকে অবহিত করে আদিবাসী ও বাঙালির বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
(৬) কাপ্তাই লেইক প্রকল্প বাস্তবায়নে তিগ্রস্তদের যৌক্তিক তিপূরণ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাস্তবায়নাধীন সম্ভাব্য উন্নয়ন প্রকল্পে আদিবাসীদের সমাজভিত্তিক অংশগ্রহণ নিশ্চিৎ করার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল ধরণের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
(৭) পার্বত্য চট্টগ্রামে পূনর্বাসিত সমতলীয় বাঙালি এবং আদিবাসী উভয়ের মাঝে বাংলাদেশের নাগরিক স্বত্ত্বার প্রাধান্যতা বজায় রেখে তাদের মাঝে সহনশীলতা, সহমর্মীতা ও শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টির মাধ্যমে আদিবাসী ও বাঙালির বিরোধ নিষ্পত্তির স্থায়ী ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
(৮) পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাষীদের নিজস্ব ভাষাকে প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভূক্ত করে আদিবাসীদের আইন শৃংখলা বাহিনী, সামরিক ও বেসরকারি প্রশাসন, দাতা ও স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থার কাছে তাদের সমস্যাদি তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে আদিবাসী ও বাঙালির বিরোধ নিষ্পত্তিসহ সার্বিক উন্নয়ন সাধন করা।
(৯) পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ, নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর বিস্তৃতি ও পরিসংখ্যান, ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কৃতি, শিক্ষা ও পেশাগত অবস্থা, জীবনযাত্রা ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদির কার্যকর সঠিক তথ্যাদির ভিত্তিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তায়নে সর্বজন গ্রহণযোগ্য সমন্বিত উন্নয়ন নিশ্চিৎ করা।
(১০) পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদ, আইন শৃংখলা রায় নিয়োজিত পুলিশ ও পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনী, রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রশাসন, দাতা ও সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সমূহের কার্যক্রমে কার্যকর সমন্নয় সাধনের মাধ্যমে আদিবাসী ও বাঙালির বিরোধ নিষ্পত্তিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়ন সাধন করা ।
০৫. উপসংহার
পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি ও জাতিগত সংঘাত দূর করে নিরাপদ ও শান্তি-সমৃদ্ধির উন্নত সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের জনপদ ফিরিয়ে আনতে হলে চলমান সংকটের কারণ বিশেষণ পূর্বক এসব সংকট নিরসন করে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সহায়ক পরিবেশে প্রস্তাবিত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলপত্র অনুযায়ী বাস্তব ও কার্যকর পদপে গ্রহনের মাধ্যমে চলমান ভূমি ও জাতিগত সংঘাত দূর করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্যমান প্রাকৃতিক সম্পদকে লাগসই পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে কাজে লাগিয়ে নিরাপদ উন্নত সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের শান্তি-সমৃদ্ধির পার্বত্য চট্টগ্রামের বিনির্মাণ করা অবশ্যই সম্ভব এবং এটাই আজকের সময়ের যৌক্তি দাবী।
আদিবাসী শিশু ও কিশোর-কিশোরী এবং নারীদের সার্বিক বিকাশ, নিরাপত্তা এবং জীবনযাত্রার উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক ও আইনগত এবং কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন দুর্বলতা দূর করে এসবের কার্যকর বাস্তবায়ন উন্নয়ন ঘটাতে পারলে তাদের প্রত্যাশিত সার্বিক বিকাশ, নিরাপত্তা এবং জীবনযাত্রার উন্নয়ন সাধন সম্ভব। পাশাপাশি নিবন্ধে উলেখিত চলমান সংকট সমূহ অনুধাবন করে সংকট সমাধানে প্রস্তাবিত কৌশলপত্র অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করা গেলে সীমাহীন প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ পার্বত্য চট্টগামকে আবারো শান্তির আবাস ও সমৃদ্ধ জনপদে পরিনত করা সম্ভব।
আদিবাসীরা প্রকৃত অর্থেই নিরীহ ও বিশ্বস্থ, পরিশ্রমী ও নিষ্ঠাবান। প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মানসিকতা নিয়ে ওরা পাহাড়ি প্রাকৃতিক সম্পদ সংশিষ্ট বৃহৎ অর্থে প্রধান পেশা হিসেবে কৃষিকাজে জড়িত। তাই পরিলতি ব্যবস্থাপনার দূর্বলতা দূর করে সার্বিক উন্নয়ন ঘটাতে পারলে তাদের নিরাপত্তা বিধান, মর্যাদা ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধন করা অবশ্যই সম্ভব হবে।
অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এই পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান ভূমি ও জাতিগত সংকট ও সংঘ তের বাস্ত ভিত্তিক কার্যকর সমাধানের জন্যে প্রয়োজন সমতলীয় বাঙালি এবং আদিবাসীদের মধ্যে সহনশীলতা ও সহমর্মীতায় প্রেম-প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ এক সুশীল সভ্য সমাজ গঠন। আমাদের প্রত্যাশায় পার্বত্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদ, সেনাবাহিনী ও পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সকলের স্বনিষ্ঠ সমন্বিত কার্যকর উদ্যোগ।
আমাদের কাঙ্খিত ল্েয পৌঁছতে হলে চলমান সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন সংশিষ্ট দুর্বলতা ও সংকট দূর করে নিরপে সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিৎ করেই পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়ন করা সম্ভব হতে পারে। প্রশাসনিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক চিন্তা ও কর্মের শুদ্ধতায় অনুকুল পরিবেশে সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হবে।
পরিশেষে একথা জোর দিযে বলা যায় যে, যথাযথ সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষি সম্পদ, বনজ সম্পদ, মৎস্য ও জলজ সম্পদ, খনিজ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ লাগসই পরিবেশবান্ধব যৌক্তিক ব্যবহারে এই আদিবাসীরা নিজেরা সম্পদ-সমৃদ্ধি নিয়ে বেঁচে থেকেও রাষ্ট্রীয় উৎপাদন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অসামান্য ভূমিকা রাখতে সম হবে।
05/08/2015 at 12:41 am
আমি চাকমা ভাষা শিখতে চাই